আমরা যদি নিজেদের অন্তরে ভালোবাসাকে খুঁজে পেতে পারি, তাহলে অবশ্যই ঈশ্বরকে খুঁজে পেতে পারব। আমাদের মধ্যে কোন চিন্তার উদয় হচ্ছে সে সম্পর্কে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের শব্দ অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যতটা গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাধারা।
এই চিন্তাধারার কার্যকলাপ অনেক দূর পর্যন্ত, যা সুদূর প্রসারিত হয়। সত্য একটাই তাকে হাজার উপায় বর্ণিত করা হয়, কিন্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তার সারকথা একই।
একটি শব্দের আদর্শ হল ঐশ্বরিক, আধুনিক ভারতের শ্রষ্ঠা রূপে বিবেকানন্দের নাম উল্লেখ করলে, তা অত্যুক্তি করা হবে না। বহু বিদগ্ধ পন্ডিত মন্ডলী আপন আপন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেকানন্দকে মূল্যায়ন করেছেন।
তিনি বলেন নবজাগরণের সারথি,উত্তমের নব রূপকার, তার প্রতিটি শব্দ রোমকুপ, শিরা, উপশিরায় রক্ত কে আন্দোলিত করে।
ভারত বলতে কী বোঝায় ? যাহা এখন আমি বলিব। যাদের চক্ষু জড়বস্তুুর আপাত ঔজ্জ্বল্যে আবদ্ধ আছে। যারা সারা জীবন টাকে ভজন পান এবং সমগ্ৰ দেবতার নিকট বলি দিয়েছে , যারা অর্থ ও ভূমিখন্ডকেই অধিকারের চূড়ান্ত সীমা বলে স্থির করিয়াছে, যারা ইন্দ্রিয় সুখ কে উচ্চতম সুখ বুঝিয়াছে, অর্থকেই যারা ঈশ্বরের আসন দিয়েছে, যাদের চরম লক্ষ্য ইহলোক এর কয়েক মুহূর্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও অতঃপর মৃত্যু।
যাদের চিন্তায় দূরদর্শিতা থাকে না, যারা ইন্দ্রিয় ভোগের ওপরে কোন কিছু চিন্তা করে না, এইরূপ ব্যক্তিগণ যদি ভারতে যায় তারা কি দেখে ? তারা দেখে চারিদিকে কেবল দরিদ্র, আবর্জনা, কুসংস্কার, এবং অন্ধকার বীভৎস ভাবে তাণ্ডব নৃত্য করছে।
পাশ্চাত্য জাতি তাহাদের বাহ্য অবস্থার উন্নতি করিতে চেষ্টা করিতেছে, ভারত কিন্তু অন্য পথে গিয়াছে। যারা কখনো অপরের দ্রব্যে লোভ করে নাই, তাদের একমাত্র দোষ এই যে তাদের দেশের ভূমি অতি উর্বরা। যদি তুমি তোমার দেশের যথার্থ কল্যাণ চাও, তবে তোমার তিনটি জিনিস থাকা চাই-ই-চাই।
১. প্রথমত হৃদয়বত্তা :-
তোমার ভাইদের জন্য কি তোমার প্রান কাঁদিতেছে? জগতে এত দুঃখ, কষ্ট, এত অজ্ঞান এত কুসংস্কার রহিয়াছে ইহাকে তুমি যথার্থই মনেপ্রাণে অনুপ্রাণিত করো, সকল মানুষকে ভাই বলিয়া যথার্থই কি তোমার কোন অনুভব হয়? তোমার সমগ্র অস্তিত্বটাই কি এইভাবে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে? উহা কি তোমার রক্তের সহিত মিশিয়া গিয়াছে? তোমার শিরায় শিরায় প্রবাহিত হইতেছে? ইহা কি তোমার প্রত্যেক স্নায়ুর ভেতর ঝংকার দিতাছে? যদি ইহা যাইয়া থাকে তবে বুঝিতে হইবে, তুমি প্রথম সোপানে মাত্র পদার্পণ করিয়াছো।
২. তারপর চাই কৃতকর্মতা :-
আচ্ছা বলতো দেখি তুমি দেশের কল্যাণে কোনো নির্দিষ্ট উপায় স্থির করিয়াছো কি? জাতীয় ব্যাধির কোনরূপ ঔষধ তুমি আবিষ্কার করিয়াছো কি ? এমনকি উপায় তুমি আবিষ্কার করিয়াছো যেখান থেকে খাদ বাদ দিয়ে খাঁটি সোনা টুকু গ্রহণ করা যেতে পারে ? যদি তা করিয়া থাকো তবে বুঝতে হবে, তুমি দ্বিতীয় সোপানে মাত্র পদার্পণ করিয়াছো।
৩. আরও একটা জিনিসের প্রয়োজন তাহলো প্রাণপণ অধ্যবসায় :-
তুমি যে দেশের কল্যাণ কড়িতে যাইতেছ, বলতো দেখি তোমার আসল অভিসন্ধি টা কি?নিশ্চিত করিয়া বলিতে পারো যে অর্থ, মান, যশ ও প্রভুত্বের বাসনা তোমার এই দেশরহিত করার পেছনে নেই? তুমি কি নিশ্চিত ভাবে বলিতে পারো? তুমি যা চাও তুমি তা জানো? আর তোমার জীবন বিপন্ন হইলেও তোমার কর্তব্য সাধনে ব্রতী থাকিবে?
এই গুণ যদি থাকে তবে তুমি প্রকৃত সংস্কারক। তবেই তুমি যথার্থ শিক্ষক। আমাদের নমস্য ।
ফল কামনা করো কেন আমাদের কেবল কর্তব্য করিয়া যাইতে হইবে। ফল যা হওয়ার তা হতে দাও।
যুব নায়ক স্বামী বিবেকানন্দের মুখনিঃসৃত বাণীর ভাবানুবাদ আজ এখানেই শেষ করলাম। যদি আপনি এই নীতি বাক্যগুলি ও জ্ঞান মূলক বাণী মেনে চলেন তাহলে এটি আপনার জীবনে চলার পথে অনেক সাহায্য করবে আপনাকে।