যখন অর্থ-সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায়, তখন পাত্র-মিত্র বন্ধুবান্ধব এমনকি স্ত্রী ও তাকে পরিত্যাগ করে চলে। আবার ঐ সম্পদ যখন পুনরায় ওই ব্যক্তি লাভ করে তখন আবার ওই পাত্র-মিত্র বন্ধু-বান্ধবী আত্মীয়-স্বজন এমনকি স্ত্রী ফিরে আসে। এদিক থেকে বিচার করলে অর্থই হলো প্রকৃত বন্ধু।
আনুমানিক 370 খ্রিঃ পূর্বাব্দে ভারত বর্ষের মাটিতে একজন দার্শনিক, অর্থনীতিবীদ ও রাজ উপদেষ্টার আবির্ভাব ঘটেছিল তিনি হলেন চাণক্য বা কৌটিল্য।
তিনি ছিলেন প্রাচীন তক্ষশীলা মহাবিদ্যালয় অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির অধ্যাপক । পরবর্তীকালে চন্দ্রগুপ্ত কে আপন শিক্ষা ও আদর্শে অনুপ্রাণিত করেন। মৌর্য সাম্রাজ্য বংশের উত্থানের প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেন। এবং চন্দ্রগুপ্ত পুত্র বিন্দুসারের রাজ উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
চাণক্য নীতি ও অর্থশাস্ত্র নামে দুটি গ্রন্থ চাণক্য বা কৌটিল্য রচনা করেছিলেন। থমাস ট্রটম্যান মতে অর্থশাস্ত্রের রচয়িতার প্রকৃত নাম বিষ্ণুগুপ্ত এবং তার গোত্রের নাম হল কৌটিল্য। এই নিয়ে মতভেদ এর অন্ত নেই, যাইহোক আমি চাণক্য বা কৌটিল্যের কিছু নীতিবাক্য এখন আপনাদের জানাবো। যদি এই নীতি বাক্যগুলি আপনি শোনেন এবং মেনে চলেন তাহলে আপনার জীবনে চলার পথকে অনেক পরিবর্তন ও মসৃণ করে তুলতে পারবেন। আপনি মানুষকে সঠিকভাবে চিহ্নিত পারবেন ভালো খারাপের পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
কাঁটাও দুষ্ট লোকের থেকে বাঁচার উপায় হল নিজের পদযুগল জুতোর মোড়কে আটকে রাখার চেষ্টা করুন।
অথবা তার ওপর এমন আঘাত করো যাতে সে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এবং তোমার থেকে সর্বদা দূরে থাকে।
যে ব্যক্তি অশুদ্ধ কাপড় পরিধান করে, যে নিজের দাঁত রোজ পরিস্কার করে না, যে অতিরিক্ত ভজন ভক্ষণ করে, যে অশ্লীল ভাষা দ্বারা কথা বার্তা প্রদান করে, এবং যে কঠোর বাক্য দ্বারা বার্তালাপ করে, যে সূর্য উদয়ের পর বিছানা পরিত্যাগ করে। ওই ব্যক্তি যতই অর্থবান ও জ্ঞানী পন্ডিত ব্যক্তি হোক না কেন লক্ষ্মীর কৃপা দৃষ্টি থেকে সে বঞ্চিত হয়। পাপ কর্ম দ্বারা অর্জিত অর্থ ক্ষণস্থায়ী 10 বছর পর্যন্ত এই অর্থ থাকে তারপর তা নিঃশেষ হয়ে যায়।
একজন মহান জ্ঞানী ব্যক্তি যখন কোনো খারাপ কাজ করে ফেলে তাকে কেউ কিছু বলেনা কিন্তু যদি একটি নিচ দুষ্টু লোক যদি একটি সঠিক কার্যকরে তাকে সকলে ধিক্কারই দেয়।
অমৃত পান তো খুব সুখকর ও সঠিক কর্ম কিন্তু রাহু কে অমৃত পানের কারণেই কিন্তু প্রাণ হারাতে হয়েছিল। বিষ পান করা তো গর্হিত কর্ম, কিন্তু মহাদেব বিষপান করেই তো নীলকন্ঠ হয়েছেন, যা তার অলংকারে পরিণত হয়েছে।
ওই সঠিক ভোজন যা ব্রাহ্মণ গুরু ও জ্ঞানী ব্যক্তিকে দেওয়ার পর অবশিষ্ট থাকে। সেটাই প্রকৃত প্রেম, যা অপরজনকে প্রদান করা যায়।
সেটাই সঠিক জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা যা কোন পাপ কর্ম করা থেকে বিরত রাখে। সেটাই শ্রেষ্ঠ দান যা করার পর কোন প্রত্যাশা থাকে না।
যে ব্যক্তি কোন কিছু পরীক্ষা বা বিচার করতে জানে না সে অতি মূল্যবান রত্ন কেও পদধূলিতে মাড়িয়ে চলে যায়। এবং তৃণ কে মাথার ওপর ধারণ করে। এতে রত্নের মূল্য কমে যায় না এতে তৃণের মূল্য বৃদ্ধি পায় না
কিন্তু যখন প্রকৃত জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তি উপস্থিত হয় তখন সে সঠিক বস্তুকে সঠিক জায়গা দেখিয়ে দেয়।
যদি কোন ব্যক্তি কোন প্রাণী বা পশুর ওপর স্বহৃদয় প্রেম ভাব প্রকাশিত করে তবে তার কোন জ্ঞানের প্রয়োজন কি ? কোন জটা রাখার প্রয়োজন নেই এবং নিজের শরীরের কোন মার্জনা করারও প্রয়োজন নেই।
দুনিয়াতে এমন অর্থ-সম্পদ নেই, যা দ্বারা তোমার শিক্ষাগুরু যে তোমায় এক অক্ষর শিক্ষা দান করেছে তার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। শাস্ত্রের জ্ঞান অসীম কিন্তু মানুষের জীবন খুব ক্ষুদ্র, তাই ঐ সমস্ত জ্ঞান অর্জন করা উচিত যা অতি প্রয়োজন।
যেমন রাজহংস জল দুধ একসাথে মেশানো থাকলে জল পরিত্যাগ করে দুধ পান করে নেয়। ওই ব্যক্তি চন্ডাল নিচ অসভ্য যে একজন অভুক্ত অতিথিকে খাবার না দিয়ে নিজে সে খাবার ভক্ষণ করে।
একজন ব্যক্তি যদি সমস্ত বেদ অধ্যয়ন করে, সমস্ত স্বাস্থ্য অধ্যায়ন করে, সব ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে, কিন্তু কোন অনুভূতি নিজের মধ্যে জাগরিত করতে পারেনা। সে একজন বেয়ারার মত বা একজন রাধুনীর মত হয় যে সমস্ত সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্যকে একসাথে পাক করে কিন্তু ভক্ষণ করে না।
এই বাণী গুলো মেনে চললে আপনি আপনার জীবনের পথ থেকে অনেক মসৃণ করতে পারবেন এবং পথে কোন বিপদ আসলে আপনি সেটিকে খুব ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারবেন।