বন্ধু মুখী শত্রু গুলোকে ত্যাগ করুন।
আশা করি চাণক্য বা কৌটিল্যের নাম আপনি শুনেছেন । উনি এমন একজন ব্যক্তি যার বাণী আমাদের চলার পথে সঙ্গী হয়ে রয়েছে। যার লেখা বইগুলি থেকে, গ্রন্থ থেকে আপনি জানতে পারবেন , যে জীবনের যুদ্ধে সেই জয় হয় যে নিজের লক্ষ্যকে স্থির রেখে সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় এবং যে ভেঙে পড়ে না কোনোভাবেই।
কিন্তু আজ থেকে 2300 বছর আগে আজকের ধারণা অনুযায়ী লিখেছিলেন।
যিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েও শ্মশান ভূমিতে বসবাস করতেন। নিজের জায়গা জমি উদ্ধারের জন্য পরামর্শ দিতেন এবং উৎসাহ দিতেন তিনি আর কেউ নয় মহান রাজনীতিবিদ চাণক্য বা কৌটিল্য।
তো আসুন তারই কিছু বাণী আপনাদের আমি আজকে বলি, এবং জীবনে উঠে দাঁড়ানো, জীবনের সঠিক বিচার করা, সঠিক স্বপ্নের হাত ধরে এগিয়ে যাওয়া, এই বিষয়গুলি নিয়ে একটু আলোচনা করি।
চাণক্যের যেই বানি গুলি আমি আপনাকে বলব আশা করি এই বানি গুলি আপনার জীবনে পথে সঙ্গী হয়ে আপনার সাথে থাকবে।
তিনি বলেছিলেন যে যারা খাটতে পারে যারা পরিশ্রম করতে পারে তাদের কাছে কোন কিছুই কঠিন বলে বা হবে না বলে নেই।
শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্য কোন দেশে বিদেশে কোন দেশে অজানা নয় সে যেখানেই যাবে নিজের শিক্ষিত পরিচয় দিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবেপারবে ।
এবং যাদের মুখ মিষ্টি যাদের চোখে সব সময় হাসি দেখা যায় তাদের কোনদিনও শত্রু হয় না কারণ তারা শত্রু তৈরি করতে পারে না।
বাস্তবের দিকে যদি একটু দেখা যায় তাহলে আমরা এটা বুঝতে পারবো যে পরিশ্রমের দাঁড়ায় কিন্তু সফল হওয়া যায় , পরিশ্রমের দাঁড়ায় কিন্তু নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, তুমি যদি পরিশ্রম না করো তাহলে কখনো তুমি সফল হতে পারবে না, কখনোই তুমি নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে পারবে না।
যদি সমস্ত বিষয়ে তোমার নলেজ থাকে জ্ঞান থাকে তাহলে কোনদিনও বিদেশকে বিদেশ বলে তোমার মনে হবে না কারণ তোমার সব বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে।
কোন ব্যক্তি আগে থেকে খারাপ হয়না কোন ব্যক্তি শত্রু হয়না তাকে পরিস্থিতি শত্রু করে তোলে খারাপ করে তোলে । শত্রুর মধ্যে কিন্তু একটি ভালো মন আছে, যদি তুমি তার সাথে মিষ্টি হাসি দিয়ে সুন্দর ভাবে কথা বল তাহলে সেই শত্রু কিন্তু বন্ধু হয়ে যায়।
চাণক্য আরো একটি কথা বলেছিলেন যে বিরাট পশুপাল এর মধ্যেও কিন্তু সাবক তার মা কে ঠিক খুজে নেয় তেমনই যে কাজ করে অর্থ ঠিক তাকে খুঁজে নেয়।
বাস্তবিক ভাবে আমরা এটা দেখতে পারি যে আমাদের সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে পারে কিন্তু পরিশ্রম কখনো আমাদের ছেড়ে যায়না আমরা যত পরিশ্রম করব ততো সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাব তত আমাদের স্বপ্নকে পূরণ করতে পারব।
তাই সবসময় চাণক্য আমাদের পরিশ্রম করে যেতে বলেছেন।
তিনি বলেছিলেন যেখানে আমাদের অতিরিক্ত বন্ধু হয়ে যায় অতিরিক্ত পরিচয় হয়ে যায় সবার সাথে সেখানে আমরা কখনোই নিজেদের দোষ কে ডেকে রাখতে পারব না লুকিয়ে রাখতে পারব না। কথাটা কিন্তু সঠিক এ তিনি বলেছিলেন আপনার সাথে যদি কোন ব্যক্তির অনেক বন্ধুত্ব হয়ে যায় অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে যায় তাহলে কিন্তু তার থেকে আপনি আপনার কোন রকম স্বভাব লুকিয়ে রাখতে পারবেন না কোনরকম দোষ কিন্তু আপনি তার থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবেন না।
যদি আপনার কোন দোষ থাকে হয় আগে স্বীকার করে নিন নয়তো তার থেকে দূরত্ব মেন্টেন করুন দেখবেন সে আপনার কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা জানতে পারবে না।
একটা কথা সর্বদা মনে রাখবেন নিজের দোষের কথা নিজের ত্রুটির কথা কখনো কাউকে বলবেন না কারো সাথে শেয়ার করবেন না তাহলে দেখবেন সে যদি বন্ধু হয় আপনার তাহলে দেখবেন আপনি যখন বিপদে পরবেন বা যখন সুযোগ পাবে সে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে কিন্তু বেশিক্ষণ ভাববে না।
আকাশে যে পাখি উড়ে যাচ্ছে তার গতিটাও কিন্তু আপনি জানতে পারবেন কিন্তু আপনার পিঠ পিছনে আপনার বন্ধুর রূপে যে শত্রু লুকিয়ে থাকবে তার ষড়যন্ত্রের শিকার আপনি কিভাবে হয়ে যাবে না আপনি নিজেও জানতে পারবেন না।
চাণক্য এই বন্ধু মুখী শত্রু গুলোকে ত্যাগ করতে বলেছে। তিনি সর্বদা এই একই কথা বলেছেন যে মানুষকে বুঝতে হবে তার মিষ্টি হাসিতে গলে যাবেন না তার সাথে কথা বলুন সময় কাটান বুঝুন তারপরে তার সাথে বন্ধুত্ব করুন।
এই ধরনের ব্যক্তি যারা খুবই একগুঁয়েমি, একা থাকতে পছন্দ করে তাদেরকে নিজের থেকে দূরে রাখুন তারা মনে মনে কি ষড়যন্ত্র তৈরি করছে তা আপনি নিজেও জানেন না তাই এটাই ভালো হবে আপনি তাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
আদর করার অনেক গুণ শাসন করার অনেক দোষ তাইতো তিনি বলেছে পুত্র এবং কন্যা দু’জনকেই শাসন করুন। কারণ আমরা যদি অতিরিক্ত আদর দিই তাদেরকে তাহলে তাদের দোষ এবং ত্রুটি অনেক বাড়তে থাকবে কিন্তু যদি আমরা তাদেরকে শাসন করি সঠিক বিচার তাদেরকে করতে শেখায় তাহলে তাদের দোষ এবং ত্রুটি আস্তে আস্তে কমতে থাকবে এবং তারা নিজেদের জীবনের সঠিক বিচার করতে পারবে। তার মানে এই নয় আমি এটা বলছি যে আপনি সবসময় তাদেরকে শাসন করুন । শাসন করুন কিন্তু সেই শাসনের মধ্যে যেন আদর থাকে।
চাণক্য বলেছেন যে ইন্দ্রিয়ের অধীন তার যদি চতুরঙ্গ সেনাও থাকে তবুও সে বিনষ্ট হয়ে যায়।
একটা কথা মনে রাখবেন যিনি ইন্দ্রিয়কে জয় করতে পারবে যে লোভ-লালসা কে নিজের বশীভূত করতে পারে একমাত্র সেই জীবনে টিকে থাকতে পারে।
যে আড়ালে লোকের ক্ষতি করে লোকের নামে মিথ্যে কথা বলে , কিন্তু সামনে ভালো মানুষ হয়ে থাকে তার থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন একটি উদাহরণ দিয়ে আমি বুঝাচ্ছি একটি বিষের পাত্রে ওপরে দুধ ঢেলে দিলে যেমন বোঝা যায়না যে নিচে কি রয়েছে ঠিক তেমনি সেইসব মানুষ গুলি কে দেখলে বোঝা যাবে না যে তার মনের ভেতরে কি ষড়যন্ত্র চলছে আপনাকে নিয়ে।
চাণক্য বলেছিলেন “যে একটি দোষ অনেক গুণ কে নষ্ট করে দিতে পারে। ” তাইতো তিনি দোষ কে যত সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে বলেছিলেন।
কর্কশ কথা অগ্নিদাহের থেকেও ভয়ঙ্কর। আমাদের মুখের ভেতর কিন্তু কোনো অস্ত্র নেই কোনো হাড় নেই কিন্তু একটা কথা পুরো পৃথিবীটাকে দুভাগ করে রেখে দিতে পারে। তাই সবার উচিত যখনই কোনো বিষয় কথা বলব তখন সেই বিষয়টি নিয়ে একটু ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত।
জীবন যুদ্ধে সঠিক বিচার করতে না পারলে সঠিক মানুষদের সাথে মিশতে না পারলে আপনাকে সবাই বোকা বানিয়ে চলে যাবে।
তাইতো সঠিক মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করুন সঠিক পথ বেছে নিন এবং নিজের স্বপ্নকে সত্যি করে তুলুন।