মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রাক্কালে যার আবির্ভাব ইতিহাসের গতি কে পরিবর্তন করেছিল, যার আবির্ভাবে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়েছিল আরেকটি সাম্রাজ্যের নাম যার নাম মৌর্য সাম্রাজ্য। সেই বিখ্যাত কূটনৈতিক নীতির অধিকারী ভারতের ম্যাকিয়াভেলি নামে পরিচিত চাণক্য বা কৌটিল্যের বিখ্যাত কিছু বানী আমি আজকে আপনাদের জানাবো।
উদারতা, মধুর বচন ক্ষমতা, সাহসিকতা, বিবেক যুক্ত আচরণ এগুলি কেউ পায় না। প্রথমেই এই বিষয়গুলি অর্জন করে নিতে হয়। যে নিজের কূল সমাজ ছেড়ে অন্য কোন কূল ও সমাজে গিয়ে বসবাস করে, সে নষ্ট হয়ে যায়। ঠিক যেমন অধর্মের পথে চলা রাজা ধ্বংস হয়ে যায়। একটি হাতির যতই বিশাল হোক না কেন একটি ছোট অঙ্কুশের নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। এক বিশাল অন্ধকার ঘর এক প্রজ্বলিত মোমবাতির আলোতেই আলোকিত হয়ে যায়।
মানুষ ছোট বা বড়, উঁচু বা নিচু তা বড় কথা নয়। বড় বিষয় হলো তার কার্যাবলী কতটা কার্যকারী, এবং সে কতটা ক্ষমতাশালী। একটি বিদ্যুতের শিখা বৃহৎ পাহাড় কেও চুরমার করে দেয়, এখানে কে বৃহৎ তা বিচার করা হয় না এখানে বিচার করা হয় কার শক্তি কতটা বেশি, যার শক্তি যতটা বেশি সেই জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা পায়।
যে গৃহস্থের কাজে নিজেকে সম্পূর্ণ নিযুক্ত করে, সেই জ্ঞান প্রাপ্তি থেকে দূরে সরে যায় মাংসাশী প্রাণীর হৃদয়ে যেরকম দয়া মায়া থাকে না। লোভী কখনো সত্যভাষণ পালন করতে পারে না এবং একজন শিকারি কখনো শুদ্ধ হয় না। একটি নিম গাছের থেকে তিক্ততা কখনো যাবেনা, মূল থেকে অগ্রভাগ পর্যন্ত যতই ঘি বা মিষ্টি প্রদান করা হোক না কেন তার তিক্ততা বজায় থাকবে। তেমনি দুষ্ট ব্যক্তিকে যতই শাস্ত্র বাক্য ও জ্ঞান প্রদান করা হোক না কেন তার দুষ্টু দোষ কখনোই দূরীভূত হবে না।
মদের পাত্র অপবিত্র সেই পাত্রকে যতই পরিষ্কার করা হোক না কেন সেটা কখনো পবিত্র হবে না। তেমনি যতই পবিত্র জলে স্নান করানো হোক না কেন মনের অপবিত্রতা কখনোই দূরীভূত হবে না। যদি কোন ব্যক্তির জ্ঞান না থাকে তাহলে যতই রক্ষণশীল হোক না কেন তার কোনো মূল্যই নাই ঠিক যেমন এক জঙ্গলের শিকারির স্ত্রী হাতির মস্তকের সেরা মনিখোপায় পরুক না কেন তার কোনো গুরুত্ব থাকে না।
একজন বিদ্যার্থীর উত্তম বিদ্যা গ্রহণের জন্য, এই বিষয়গুলি ত্যাগ করা উচিত। ১. কাম, ২. ক্রোধ, ৩. লোভ, ৪. সুন্দরভোজনের লালসা, ৫. অতিরিক্ত সাজসজ্জা, ৬. অধিক নিন্দা, ৭. অত্যাধিক ও অপ্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসা, ৮. অতিরিক্ত আরাম করার বাসনা।
যে ব্যক্তি অপরের খুশিতে জ্বলতে থাকে, সর্বদা দম্ভ প্রকাশ করে, স্বার্থপর, চিটিংবাজ, অন্যকে ঘৃণা করে, বলার সময় মিষ্টি কিন্তু অন্তরে তিক্ততা বিরাজ করে সে প্রকৃতপক্ষে একটা কুকুর সাদৃশ্য। যে ব্যক্তি জল নেওয়ার জায়গাকে, বাগানকে, ধর্ম ক্ষেত্রেকে নোংরা করে, সে প্রকৃত অর্থে মেলেচ্ছ ব্যক্তি।
মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করার পর মৌমাছিদের কথা শোনো ও ভাবো, একটু একটু করে মধু সংগ্রহ করেছে যা থেকে তারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেনি, সেই মধু কেউ হরণ করে নিয়ে যায়। তেমনি কৃপণ মানুষের ধনের অবস্থাও একই প্রকার একটু একটু করে সঞ্চয় করে কিন্তু তা ব্যবহার করে না একদিন কেউ না কেউ এসে তা হরণ করে নিয়ে চলে যায়। চাণক্য নীতির একাদশ অধ্যায় এখানেই শেষ করলাম।
আশাকরি চাণক্য নীতি এই নীতিবাক্য গুলি আপনার জীবনে চলার পথে অনেক কাজে লাগবে, আপনি যদি নিজেকে সফল করতে চান তাহলে অবশ্যই এই নীতি গুলি মেনে চলুন। আপনাকে সাফল্য পেতে কেউ আটকাতে পারবে না।